শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠটোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বাগতিদের ১৫১ রানে অলআউট করে ওই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের দল। তিন ম্যাচের সিরিজ আগেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি বাংলাদেশের জন্য ছিল কেবলই মান রক্ষার, হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর। এমন এক ম্যাচে এসে অবশেষে জ্বলে উঠলো টাইগার বাহিনী। জিম্বাবুয়েকে ১০৫ রানে হারিয়ে সান্ত¡নার জয় তুলে নিলো তামিম ইকবালের দল। এটি আবার ছিল বাংলাদেশের ৪০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। টাইগাররা হোয়াইটওয়াশ এড়িয়ে স্বস্তির জয়।
টানা দুই ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জিতে ৯ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ ও সিরিজ জিতে নেয় জিম্বাবুইয়ে। বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা এড়ানোর প্রাণপণ লড়াই ছিল তামিম ইকবালদের। তবে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে এদিনও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে কয়েকজন ব্যাটারের প্রশ্নবিদ্ধ ধীরলয়ের ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৫৬ রান ওঠে। সেই পুঁজি নিয়ে ৮৩ রানেই জিম্বাবুইয়ের ৯ উইকেট তুলে নেয় ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের বোলাররা।
তবে সেখান থেকে দশম উইকেটে নিজেদের রেকর্ড ৬৮ রানের জুটি গড়েন রিচার্ড এনগ্রাভা ও ভিক্টর নিয়াউচি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দশম উইকেটে এই রেকর্ড জুটিতে অস্বস্তি হলেও শেষ পর্যন্ত ৩২.২ ওভারে ১৫১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। ইতিহাসে দশম দল হিসেবে বাংলাদেশের ৪০০তম ওয়ানডে ছিল এদিন। সেই ম্যাচে স্বস্তির জয় আসে, জিম্বাবুইয়ে সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে।
হারারেতে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৩২.২ ওভারেই ১৫১ রানে গুটিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক দলের এই রানও হয়েছে শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে।
বুধবার তাই ভাল কিছুর প্রত্যাশা, হোয়াইটওয়াশ লজ্জা এড়ানোর অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু অধিনায়ক তামিম নিজেই ৩০ বলে মাত্র ১৯ রানে বিদায় নেন। শূন্যতে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। এরপর চতুর্থ উইকেটে মারমুখী এনামুল হক বিজয়ের কল্যাণে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৯০ বলে ৭৭ রানের জুটি হয়েছে। দুরন্ত বিজয় ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৭১ বলে ৬ চার, ৪ ছক্কায় ৭৬ রানে বিদায় নেন। ভাল একটি সংগ্রহের ভিতও গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই ভিতে দাঁড়িয়ে অতি ধীরস্থির মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬৯ বলে ৩৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। আফিফ হোসেন ধ্রুবর সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৫৭ বলে ৫০ রান হয়েছে এরপরও।
আফিফ শুরু থেকেই দ্রুতবেগে ব্যাট চালিয়েছেন। তিনি আর সঙ্গী পাননি। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে ৮১ বলে ৬ চার, ২ ছয়ে ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৬ রানের মামুলী সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ২টি করে উইকেট লুক জংউই ও ব্র্যাড ইভান্স। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুইয়ে। এ ম্যাচে তারা অধিনায়ক রেজিস চাকাবভাকে পায়নি, রাজা ছিলেন নেতৃত্বে। বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করলেও জিম্বাবুইয়ের ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেননি। অভিষেক ক্যাপ পাওয়া এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত পেস বোলিংয়ে শুরু থেকেই বিপদে পড়ে তারা। মাত্র ১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এমনকি ফর্মের তুঙ্গে থাকা সিকান্দারকে প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন এবাদত। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এদিন জিম্বাবুইয়ে।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৮৩ রানেই ৯ ব্যাটারকে হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রহর গুনেছে। তখনই বুক চিতিয়ে লড়েছেন এনগ্রাভা ও নিয়াউচি। দশম উইকেটে বাংলাদেশী বোলারদের এলোমেলো করে দিয়েছেন মাত্র ৫৬ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়ে। জিম্বাবুইয়ের পক্ষে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোন দলের এটি দশম উইকেটের রেকর্ড। এনগ্রাভা ২৭ বলে ৬ চার, ১ ছয়ে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আর নিয়াউচি ৩১ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ২৬ রানে বোল্ড হন মুস্তাফিজের বলে। মুস্তাফিজ ৫.২ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন তাইজুল ও এবাদত। ১৭.৪ ওভার বাকি থাকতে জিম্বাবুইয়ে গুটিয়ে যায় ১৫১ রানে। বিশাল জয়ে স্বস্তি আসে বাংলাদেশের। ১০০তম ও ২০০তম ম্যাচও জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ৩০০তম ম্যাচ হারের পর ৪০০তম ম্যাচ জিতল আবার।
আগের দুই ম্যাচে ধাক্কা সামলে উঠলেও শেষ ম্যাচে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৪৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা। ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান ইনোসেন্ট কায়া ও টনি মুনুঙ্গা। তাইজুলের স্পিন ফাঁদে পড়েন তারা। এরপর মুস্তাফিজ একে একে কিলিভ মাদান্দে, লুক জনজি ও ব্রাড ইভান্সকে তুলে নেন। দলীয় ৮৯ রানে নয় উইকেট হারালে জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। তবে শেষ উইকেটে ৮৮ রান যোগ করে হারের ব্যবধান কমায় জিম্বাবুয়ে। মুস্তাফিজ শেষ উইকেট তুলে নেওয়ার আগে রিচার্ড এনগ্রাভা ৩৪ ও ভিক্টর নায়োচি ২৬ রান করেন।
স্কোর : বাংলাদেশ ইনিংস- ২৫৬/৯; ৫০ ওভার (আফিফ ৮৫*, বিজয় ৭৬, মাহমুদুল্লাহ ৩৯; জংউই ২/৩৮, ইভান্স ২/৫৩)।
জিম্বাবুইয়ে ইনিংস- ১৫১/১০; ৩২.২ ওভার (এনগ্রাভা ৩৪*, নিয়াউচি ২৬, মাদান্দে ২৪; মুস্তাফিজ ৪/১৭, তাইজুল ২/৩৪, এবাদত ২/৩৮)।
ফল : বাংলাদেশ ১০৫ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : আফিফ হোসেন ধ্রুব (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুইয়ে ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
সিরিজসেরা : সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুইয়ে; ৩ ম্যাচে ২৫২ রান ও ৫ উইকেট)।